Blog

স্যার আবেদ ও ১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধে অ্যাকশন বাংলাদেশ ও হেল্প বাংলাদেশ-এর ভূমিকা (প্রথম পর্ব)

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যার যার নিজস্ব জায়গা থেকে অবদান রেখেছিলেন। সবারই উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দীর্ঘ দিনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে দেশকে মুক্ত করা। এ-দেশের অগণিত তরুণ কেউ সম্মুখ সমরে, কেউ পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। দেশের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেমন এক ধরণের তৎপরতা ছিল, দেশের বাইরে অর্থাৎ প্রবাসী বাঙালিরাও বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় স্যার ফজলে হাসান আবেদ তখন ৩৫ বছরের টগবগে এক তরুণ— শেল অয়েল কোম্পানির হেড অব ফাইন্যান্স হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রামে। কোম্পানি থেকে তাঁকে লিয়াজোঁ অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হলে মে মাসের প্রথমদিকে তিনি লন্ডনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লন্ডনে স্যার আবেদ ও তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা মিলে ‘হেল্প বাংলাদেশ’ এবং ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চলমান গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জার্তিক মিডিয়ায় তুলে ধরেন। এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করেন। অন্যদিকে ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথিপত্র, ব্র্যাক বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা, গোলাম মোর্তজার নেওয়া ফজলে হাসান আবেদের সাক্ষাৎকার এবং স্কট ম্যাকমিলানের ‘হোপ ওভার দি ফেইট’ বইয়ের ভিত্তিতে একাত্তরে স্যার আবেদের লন্ডনে চলে যাওয়ার দুঃসাহসিক অভিযাত্রা, এবং কীভাবে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেল্প বাংলাদেশ’ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখে, তার একটি সংক্ষিপ্ত বয়ান তুলে ধরবো।

[হিস্ট্রিসাইজিং ব্র্যাক প্রকল্পের অধীনে এই ব্লগটি লিখিত। বিআইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ও ব্র্যাক-এর যৌথ উদ্যোগে চলমান এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান এবং ড. ইমরান মতিন।]

তরুণ বয়সে স্যার ফজলে হাসান আবেদ

২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর পর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ঢাকার সংযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফজলে হাসান আবেদ তখন চাকরিসূত্রে চট্টগ্রামে। ২৬ মার্চ তিনি তাঁর বাসা ছেড়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। ২৭ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তারা জানান, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বেতারে যে ঘোষণা প্রদান করবেন তার একটা ড্রাফট প্রয়োজন।’ ওই দিন দুপুরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে ঘোষণাটি প্রচার করা হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের সব রকমের যোগাযোগ। ১২ এপ্রিল সংযোগ পুনরায় শুরু হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার সঙ্গে ‘স্টল-সার্ভিস’ (শর্ট টেক অব অ্যান্ড ল্যান্ডিং) চালু হয়।  এ-সময়ে পিআইএ-এর ছোট কিছু বিমান চলাচল শুরু করে। তখনকার পরিস্থিতিতে বড় বিমানে চলাচল করা সম্ভবপর ছিল না। এছাড়া বিমান বন্দরের রানওয়েও ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। কাজেই এই ছোট বিমানগুলোকে আনা হয়েছিল।

এ-সময় স্যার আবেদ ‘স্টল-সার্ভিসে’ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। উল্লেখ্য, সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপটে আবেদ ও তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা মিলে ‘হেল্প’ (Heartland Emergency Livesaving Project) নামে যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার হেড অফিস ছিল ঢাকায়। ‘হেল্প’-এর কার্যক্রম তখনও চলছিল। এবং এ-কাজে আবেদকে প্রতি সপ্তাহেই ঢাকায় আসতে হতো। একই সময় শেল কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান জেনারেল আবদুর রহিমও ঢাকায় আসেন। তিনি ঢাকায় আবেদের অবস্থানের কথা জানতে পারেন। এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটা মিটিং ডাকেন। মিটিং-এ জেনারেল রহিম জানান, টিক্কা খানের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক শাসক) সাথে এক আলাপচারিতায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- চলমান যুদ্ধে শেল অয়েল কোম্পানি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে। এবং এ-জন্য তেল কোম্পানিগুলো থেকে একজন লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে। যিনি সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ-এর সদর দপ্তর (martial-law headquarters)-এ বসবেন, এবং পাকিস্তান আর্মির সাথে লিয়াজোঁ মেইনটেইন করবেন। তার কাজ হবে তেলের জাহাজ কখন আসবে, কোন জায়গা থেকে আসবে এবং কোন জাহাজের তেল কোথায় শোধন করা হবে এ বিষয়গুলো তদারকি করা। তিনি আরও জানান, আবেদ-ই হবেন শেল অয়েল কোম্পানির লিয়াজোঁ অফিসার। তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্রোহ করলে বিপদ হবে ভেবে আবেদ ঠাণ্ডা মাথায় কোম্পানির সিদ্ধান্ত মেনে নেন। এবং কিছুদিন কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আবেদকে বাঘের ছাপ-ওয়ালা একটা পরিচয়পত্র (Martial law Identity Card) দেওয়া হয়। এটি ছিল ‘ফ্রি মুভমেন্ট পাস’ যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন। উল্লেখ্য, ওই সময় সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর ছিল গভর্নর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন)। সেখানে আবেদকে পাকিস্তানি এক কর্নেলের সঙ্গে একই রুমে বসতে হতো। ওই কর্নেলের ছিল বাঙালি বিদ্বেষ। তিনি সবসময় বাঙালিদের নিয়ে অযৌক্তিক ও অশালীন কথাবার্তা বলতেন। এক পর্যায়ে আবেদ অনুভব করেন, এখানে থাকা তাঁর জন্য দূরহ হয়ে যাবে। তিনি তখন শেল কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করেন। এবং দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খোঁজেন। এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি জানতে পারেন আমেরিকায় তাঁর বন্ধুরা পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার জন্য তদবির করছে। সেই সময়ে একটা কাজে তিতাস গ্যাস ফিল্ডের অফিসে গেলে সেখানে লেখক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। শহীদুল্লাহ কায়সার তখন দৈনিক সংবাদ-এ চাকরি করতেন। স্যার আবেদের বয়ানে: অনেকটা  ‘অভিভাবকসুল্ভ’ উচ্চারণে তিনি তাঁকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেন। এবং বলেন, ‘তাঁর মতো তরুণদের বিপদের সম্ভাবনা বেশি।’ আবেদের চাচা ছিলেন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ সায়ীদুল হাসান। (আর পি সাহাকে মুক্তির চেষ্টা করার অভিযোগে একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হয়, তাঁকে হত্যা করে হয়েছে)। তিনি ভাসানী ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে তাঁদের এক ধরণের পারিবারিক যোগাযোগ ছিল। সব মিলিয়ে তিনি ভাবেন, এখন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছে।

ইতিমধ্যে আবেদের অনেক বন্ধু ও সহকর্মী  ভারত না হয় অন্য কোনো দেশে চলে যায়। যেহেতু এর আগে দীর্ঘদিন তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন। ফলে সেখানে তাঁর পরিচিত দেশি-বিদেশি বন্ধু-বান্ধব ছিল। তিনি মনে করেন, তহবিল সংগ্রহ কিংবা জনমত গঠন যা-ই হোক লন্ডনে গেলে তিনি ভালোভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনি লন্ডনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওই পরিস্থিতে ঢাকা থেকে লন্ডন যাওয়া ছিল বেশ দুঃসাহসিক কাজ। ঢাকা থেকে লন্ডনের সরাসরি কোনো ফ্লাইট না থাকায় তিনি প্রথমে করাচি যাওয়ার জন্য একটা ছাড়পত্র নেন। (ওই সময় ঢাকা থেকে করাচি যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল)। করাচি বিমানবন্দরে নামার পর বাঙালিদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ‘মুভমেন্ট পাস’ থাকার কারণে সে যাত্রায় তিনি রেহাই পান। কিন্তু বিমান বন্দর থেকে তিনি যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শেল কোম্পানির এক সহকর্মীর সাথে তাঁর দেখা হয়। ওই সহকর্মী করাচি এসেছিলেন ছুটি কাটাতে। তিনি আবেদকে করাচি আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তখন আবেদ বলেন, তিনিও ছুটি কাটাতে এসেছেন। এ-সময় তিনি করাচিতে কিছুদিন থাকেন। এরপর সেখান থেকে ইসলামাবাদে আসাফউদ্দৌলাহ নামে তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে যান। আসাফউদ্দৌলাহ তখন পাকিস্তান সরকারের উপসচিব পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পরদিন তিনি শেল কোম্পানির এক সহকর্মীর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। যিনি নিকটেই থাকতেন। এ-দিকে বিমানবন্দরে শেল কোম্পানির যে সহকর্মীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানকে তাঁর ঢাকা ত্যাগ করার বিষয়টি জানান। তখন শেল কোম্পানির চেয়ারম্যান পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)—এর কাছে অভিযোগ করেন, তাদের কোম্পানির একজন বাঙালি অফিসার কাউকে না জানিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে এসেছে। তাকে যেন গ্রেফতার করা হয়। এই একই বার্তা পাঞ্জাবের গভর্নরের কাছেও পাঠানো হয়। খবর পেয়ে আইএসআই -এর কর্মীরা আবেদকে গ্রেফতার করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শেল কোম্পানির ইসলামাবাদ অফিসে নিয়ে যান। এ-সময় আইএসআই-এর এক কর্নেল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ-সময় তারা আবেদের জিনিসপত্র-ও তল্লাশি করেন। কিন্তু অভিযোগ করার মত কিছু না পেলেও বার বার তাঁকে ইসলামাবাদে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন। আবেদ প্রতিবারই বলেন, তিনি ছুটি কাটাতে এসেছেন। এ-সময় আইএসআই তাঁর কাছে সম্প্রতি পাওয়া প্রোমোশনের একটা কাগজ দেখতে পান। সেখানে তাঁর বেতনের কথা উল্লেখ ছিল (৪, ৯০০ রূপি/ ১০২৯ ডলার)। তখনকার প্রেক্ষাপটে এমন বিপুল অংকের বেতন দেখে আইএসআই-এর কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতে পারেননি যে এত মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি চলে এসেছেন।

ম্যারিয়েটা (Marietta Procopé),  ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এ-সময় তাঁর বন্ধু আসাফউদ্দৌলাহ ব্রিটিশ হাইকমিশনে খবর পাঠান- তাদের একজন নাগরিককে আইএসআই আটকে রেখে হয়রানি করছে। উল্লেখ্য, আবেদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিল। যুদ্ধের সময় নিয়ম ছিল সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকলে কোনো ব্রিটিশ নাগরিককে পাকিস্তান আর্মি কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যেহেতু আবেদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না, ফলে ব্রিটিশ হাই কমিশনের মধ্যস্থতায় দুইদিন পর তিনি ছাড়া পান। তাঁর পাসপোর্ট-ও  ফেরত দেওয়া হয়। তখন যে সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, তিনি তাঁকে আসাফউদ্দৌলাহর বাড়িতে পৌঁছে দেন। এবং খাইবার গিরিপথ দিয়ে আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আবেদেরও সেরকম-ই ভাবনা ছিল। কারণ, তখন পাকিস্তান থেকে কোনো বাঙালিকে দেশের বাইরে যেতে হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হত। ‘মুভমেন্ট পাস’ থাকলেও অনুমতি সংগ্রহের কাজটি ছিল বেশ কঠিন। কাজেই আফগানিস্তান হয়ে লন্ডনে যাওয়াই ছিল তখনকার পরিস্থিতিতে একমাত্র উপায়।

দুইদিন কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের পর আবেদ ছাড়া পান। পরদিন খুব সকালে ইসলামাবাদ থেকে ট্যাক্সিতে করে তিনি পেশোয়ার রওনা দেন, যা ছিল আফগান বর্ডার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। ৪-৫ ঘণ্টার এক যাত্রা শেষে তিনি পেশোয়ার পৌঁছান এবং একটা হোটেলে ওঠেন। পরদিন সকালে খাইবার পাসের বাসে চড়েন এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে চেকপোস্ট পার হয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছান। এরপর আরেকটা বাসে করে চলে যান জালালাবাদ। সেখান থেকে অন্য একটি বাসে চড়ে কাবুল। পৌঁছাতে পৌঁছাতে তাঁর সন্ধ্যা হয়ে যায়। তখন মে মাস। কাবুলে পৌঁছে তিনি সেখানকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল ‘হোটেল কাবুল’-এ ওঠেন, কারণ তিনি যে ছুটি কাটাতে এসেছেন তা নিয়ে কেউ যেন সন্দেহ না করে। কাবুলে বসে তিনি ভাবেন, কাকে তাঁর অবস্থার কথা জানানো যায়। তাঁর পরিচিত অধিকাংশ বন্ধুরাই তখন সংকটাপন্ন অবস্থায়, নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। এ-সময় তাঁর পুরনো বান্ধবী ম্যারিয়েটার কথা মনে পড়ে। তিনি ম্যারিয়েটাকে টেলিগ্রাম করে পরিস্থিতি ব্যাখা করেন এবং তাঁর জন্য লন্ডনের একটা টিকেটের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। টেলিগ্রাম পেয়ে ম্যারিয়েটা অ্যারিয়ানা এয়ারলাইন্সের একটা টিকেটের ব্যবস্থা করেন। দুই সপ্তাহ কাবুল থাকার পর কাবুল থেকে ইস্তানবুল হয়ে সেখান থেকে আবেদ লন্ডনে পৌঁছান।


লেখক রাব্বী আহমেদ, জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে যুক্ত আছেন ব্র্যাক এবং বিআইজিডি’র যৌথ উদ্যোগে চলমান হিস্ট্রিসাইজিং ব্র্যাক প্রোজেক্ট-এ। প্রকল্পটি বর্তমানে সমন্বয় করছেন জুমানা আসরার। এই প্রকল্পে আরও যুক্ত আছেন মোঃ শফিকুল ইসলাম।

তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থাবলী

১) ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাক, গোলাম মোর্তজা; মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৬

২) হোপ ওভার দি ফেইট, স্কট ম্যাকমিলান; রৌম্যান অ্যান্ড লিটলফিল্ড, ২০২২

৩) ফ্রিডম ফ্রম ওয়ান্ট, ইয়ান স্মাইলি; দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০৯

৪) অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান গৃহীত কায়সার জামানের সাক্ষাৎকার; ২০২১

৫) ব্র্যাক উন্নয়নের একটি উপাখ্যান, ফারুক চৌধুরী, সুবল কুমার বণিক ও সাজেদুর রহমান; দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০৯

৬) ফর্মেশন অব ব্র্যাক: অ্যা হিস্টোরিক্যাল অ্যাকাউন্ট, আবু আহসান, সুমাইয়া ইকবাল; বিআইজিডি মনোগ্রাফ নং-১, এপ্রিল ২০২২

৭) মানুষ বড় কাঁদছে: সত্তরের ঘূর্ণিঝড় ও ‘হেল্প’ প্রতিষ্ঠা; রাব্বী আহমেদ, শেষ বার দেখা হয়েছে ২৫ মার্চ, ২০২৩। লিংক- https://bigd.bracu.ac.bd/the-70s-bhola-cyclone-and-the-creation-of-help/

৮) পান্থজনের সখা; যেহীন আহমদ, শেষ বার দেখা হয়েছে ১ এপ্রিল, ২০২৩ লিংক- https://gaanpaar.com/tribute-to-fazle-hasan-abed-by-zahin-ahmed/

৯) শাল্লা প্রোজেক্ট: অ্যান ইন্টিগ্রেটেড প্রোগ্রাম ফর ডেভেলপমেন্ট; ব্র্যাক, ১৯৭২-১৯৭৩।

Up