মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনের রাস্তায় ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর র্যালি। শাড়ি পরিহিতার পেছনে ফজলে হাসান আবেদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনের রাস্তায় ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর র্যালি। শাড়ি পরিহিতার পেছনে ফজলে হাসান আবেদ।
লন্ডনে ইতিমধ্যে বিদেশিরা বাংলাদেশের স্বপক্ষে একটি আন্তজার্তিক ক্যাম্পেইন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করছিলেন। ম্যারিয়েটা পল কনেট (Paul Connett) ও অ্যালেন কনেট (Ellen Connett) নামে আরও দুই প্রবীণ অ্যাক্টিভিস্টের সাথে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। এই কনেটদ্বয় এর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী আফ্রিকান রাষ্ট্র বায়াফ্রার সমর্থনে একটি আন্তজার্তিক মোর্চা গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৬৭ সালে বায়াফ্রা নাইজেরিয়া থেকে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত একটি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এবং শেষমেশ বায়াফ্রা হেরে যায়। তাঁরা ভাবছিলেন, বাংলাদেশের ভাগ্যেও হয়তো একই পরিণতি লেখা থাকবে। তখনও এই ধরণের বিভিন্ন তৎপরতা অনেকটা অগোছালো ভাবে চলছিল। এর মধ্যে আবেদ লন্ডনে পৌঁছান এবং তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হোন। লন্ডনে গিয়ে প্রথমে তিনি শেল কোম্পানির হেড কোয়ার্টারে গিয়ে চাকরির পদত্যাগ পত্র জমা দেন। ওই সময় আবেদের বন্ধু ব্যারিস্টার ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, যিনি ‘হেল্প’ প্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনিও লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। তাঁদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ সমন্বিতভাবে কার্যক্রম শুরু করে। শুরুর দিকে ম্যারিয়েটা আর্থিক সহায়তা দেন। ক্যামডেন হাউজে ম্যারিয়েটা ও আবেদের যৌথ মালিকানায় একটি ফ্ল্যাট ছিল, ১৯৬৪ সালে যেটি তাঁরা কিনেছিলেন। তাঁরা ঐ ফ্ল্যাটটিকে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর হেড কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব দ্রুত এটি ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের প্রধান আখড়া হয়ে ওঠে। প্যামপ্লেট ও পোস্টারে পুরো বাড়ি ছেয়ে যায়।
‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করা। এ-জন্য প্রথমেই তারা ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পৃথিবীকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তারা মনে করেন, বিশ্ববাসী যদি প্রকৃত ঘটনা উপলব্ধি করতে না পারে তাহলে জনমত গঠন করার কাজটি দূরহ হবে। এছাড়া সাহায্য-সহযোগিতাও পাওয়া যাবে না। এ কারণে শুরুতেই তারা ‘লন্ডন টাইমস’ পত্রিকায় বেশ বড় একটি বিজ্ঞাপন দেন। যেখানে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ও জাতিসংঘের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’ তখন জুন মাস। ইতিমধ্যে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী (যিনি পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি মনোনীত হন) লন্ডনে পৌঁছান এবং লন্ডনের প্রবাসী বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। যেটি ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজকে আরও বেগবান করে। কাজ করতে গিয়ে তাঁরা অনুভব করেন যে— অনেকক্ষেত্রে তাঁদের কাজ করা প্রয়োজন। এই সময় আমরাদেখতে পাই, ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কর্মীরা মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে চলমান গণহত্যার বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখা করছেন। এছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য তাঁরা ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে দেনদরবারও অব্যাহত রাখেন। ১ আগস্ট ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ট্রাফালগার স্কয়ারে একটা র্যালির আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশের সমর্থনে প্রায় ২৫ হাজার লোক উপস্থিত হয়। ওই একই দিনে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাংলাদেশের সমর্থনে অনুষ্ঠিত হয় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। বিটলস ব্যান্ডের লিডগিটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্করের উদ্যোগে আয়োজিত এ কনসার্টে অংশ নেয় প্রায় ৪০, ০০০ মানুষ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বব ডিলানসহ সেই সময়ের আরও অনেক বিশ্বখ্যাত শিল্পী। পরবর্তীতে এই কনসার্ট ও অন্যান্য অনুষঙ্গ থেকে পাওয়া প্রায় ২,৪৩,৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে ব্যয় করা হয় শরণার্থীদের সাহায্যার্থে।
ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের বাইরে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। এ-সময় কর্মীরা পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন প্যারিস, কোপেনহেগেন-এ যান এবং সেখানকার মিডিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। তাঁরা সেখানকার রেডিও ও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নৃশংস পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। যেহেতু, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, কাজেই সেখানকার রেডিও-টিভিতে সাক্ষাৎকার প্রচারের জন্য তাঁদের বেশ বেগও পেতে হয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অবস্থান, ঘটনার প্রেক্ষাপট, গণহত্যা, বাংলাদেশের তখনকার পরিস্থিতি এই বিষয়গুলো মিডিয়ার কাছে তুলে ধরা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। সেই সময় ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর পক্ষে স্যার আবেদ কোপেনহেগেন-এ একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেন। এবং বাংলাদেশে যে নির্মম গণহত্যা চলছে সে বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে সে-সময় আন্তজার্তিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলেন তা হলো; বাংলাদেশ কি স্বাধীন হয়ে টিকে থাকতে পারবে? দেশটিতে কী পরিমাণ সম্পদ আছে? বছরে কী পরিমাণ পণ্য রফতানি করতে পারবে? বাংলাদেশ কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, ‘যদি আমরা স্বাধীন হই, তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারবো। আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।’ পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে এই সাক্ষাৎকারগুলো প্রচারের পর বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে জানা শুরু করে।
এদিকে ‘হেল্প’-এর আরেক প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য কায়সার জামান যুদ্ধ শুরু হবার কিছুদিন পর আমেরিকায় চলে যান। সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ নামে একটি লবিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কায়সার সেখানে কাজ করেন। অন্যদিকে ‘হেল্প’-এর অন্যান্য সদস্য যেমন, জন রোডি, লিঙ্কন চেন, রিচার্ড ক্যাশ ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরটেরিতে (বর্তমান আইসিডিডিআর’বি) কাজ করছিলেন। যেহেতু এরা সবাই ছিলেন মার্কিন নাগরিক, কাজেই যুদ্ধ শুরু হবার পর মার্চের ২৮ বা ২৯ তারিখের দিকে আমেরিকা তাঁদেরকে বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে নেয়। আমেরিকায় ফেরার সময় তাঁরা ঢাকা টেম্পল কমপ্লেক্স-এ হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর সংগঠিত গণহত্যার বেশ কিছু ছবি সঙ্গে করে নিয়ে যান। এবং দেশে ফিরে পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার জন্য তদবির করা শুরু করেন। তাঁরা সিনেট হেয়ারিং-এ এই মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। আমেরিকার সিনেটরদের তাঁরা গণহত্যার ছবিও দেখান। জন রোডি ভয়েস অব আমেরিকাতে বিবৃতি দেন। একদিকে ফজলে হাসান আবেদ ও তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা লন্ডনে, এবং কায়সার জামান ও অন্যরা আমেরিকায় তাঁদের কর্মকাণ্ড অব্যহত রাখেন। লিংকন চেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহমর্মী শ্রী কুমার পোদ্দার নামের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ব্যবসায়ী কাছ থেকে তৎকালীন ২৫ হাজার ইউএস ডলার সাহায্য পেতে সহযোগিতা করেন।
এদিকে আগস্ট মাসে আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম ‘নিউজ উইক’-এ পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর নজরে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়: পূর্ব পাকিস্তানে এ বছর আমন ধান না হবার কারণে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এবং যে যে অঞ্চল পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল সেখানেই খাদ্য সরবরাহ করা হবে। অন্য অঞ্চলগুলোতে যেন খাদ্য না পৌঁছায়, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ওখানকার পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও কিছু সংবাদ প্রকাশ পায়। কুষ্টিয়া নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়: ‘পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর একটি জনপদ যেভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়, কুষ্টিয়া শহর ঘুরে আমরা সেরকম দৃশ্যই দেখতে পেয়েছি।’ প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর আগের বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করায় ইউরোপের দেশগুলোতে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ‘নিউজ উইক’-এ দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত দিয়ে যে খবরটি প্রকাশ পায়, তা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজে কিছুটা কৌশলগত পরিবর্তন আনে। এ যাবৎ তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও প্রচারণার কাজগুলো করছিল। এ-পর্যায়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয়- কার্যক্রম শুধুমাত্র প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। একই সঙ্গে মুক্তাঞ্চল বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সাহায্য পাঠানোর কাজটিও করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর পাশাপাশি ‘হেল্প বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে তোলে। নতুন এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।
এ-পর্যায়ে আবেদ ও ভিকার মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক লোকজনের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন এবং বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ-সময় তাঁরা লন্ডনস্থ সোভিয়েত দূতাবাসে যান এবং সোভিয়েত সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধে তাঁদেরকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। জুলাই মাসে আবেদ ভিয়েতনামের পক্ষে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা একটা গ্রুপের এক সদস্যের কাছ থেকে রহস্যময় ফোনকল পান। ওই গ্রুপটি ক্যামডেন হাউজে আবেদ ও ভিকারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এদের মধ্যে দু’জন ছিলেন ইংরেজ এবং একজন অস্ট্রেলিয়ান। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, এই গ্রুপটি তাঁদের পক্ষ হয়ে ‘নাশকতামূলক তৎপরতা’ চালাবেন। খসড়া পরিকল্পনা হিসেবে আবেদ ও ভিকার তাঁদেরকে পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দর বা অন্য কোনো জাহাজে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলেন। গ্রুপটি জানায়, ‘গুজরাট উপকূল থেকে মাছধরা ট্রলার নিয়ে তারা করাচি সমুদ্রবন্দরে যাবে এবং সেখানে জাহাজে বোমা পেতে বিস্ফোরণ ঘটাবে।’ এই কাজের জন্য গ্রুপটির সাথে তাঁদের ১৬ হাজার ৮০০ পাউন্ডের একটা চুক্তিও হয়। সেই সময় আবেদ ও ভিকার ভেবেছিলেন, এটি করতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও সাহসিকতার প্রমাণ মিলবে। একই সাথে বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশের নামও উঠে আসবে। কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবার কারণে তাঁদের কিছুটা দ্বিধান্বিত হতেও দেখা যায়। এ-বিষয়ে গোলাম মোর্তজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (২০০৬) ফজলে হাসান আবেদ বলেন:
‘সন্দেহ নেই এরকম একটি নাশকতামূলক কাজ করতে পারলে সেটা বেশ চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হবে। বিশ্ব প্রচারমাধ্যমে উঠে আসবে বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও সাহসিকতার প্রমাণ হবে। কিন্তু এ-ধরণের একটি ব্যয়বহুল কাজ করব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।’
পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের আগে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সাথে দেখা করার। যেহেতু মুজিবনগর সরকারের পক্ষে প্রায় সব কাজই তখন তাজউদ্দীন করছিলেন, ফলে বিষয়টিকে তিনি কীভাবে দেখেন বা তাঁর অন্য কোনো পরামর্শ বা পরিকল্পনা আছে কিনা এ বিষয়টি তাঁদের জানার দরকার ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে আবেদ ও ভিকার কলকাতার থিয়েটার রোডে তাজউদ্দীনের অফিসে যান এবং পরিকল্পনার বিষয়টি তাঁকে বলেন। তাঁরা এও জানান যে, ‘এ জন্য তাঁরা ১৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন এবং শত্রুঘাঁটিতে নাশকতামূলক এই কাজটি করে তাঁরা বিশ্বকে চমকে দিতে চান।’ সবকিছু শোনার পর তাজউদ্দীন এ ধরণের অভিযানের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বলেন এবং এই কাজে এত অর্থ ব্যয় করা উচিৎ হবে না বলে মত দেন। তিনি এও জানান যে, মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাঁরা পুরোপুরি ভারত সরকারের উপর নির্ভরশীল। এই বাবদ যে অর্থ সংগ্রহ হয়েছে সেটা পেলে তাঁরা নিজেরাই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন। এ-সময় ভিকার চৌধুরীর সঙ্গে কলকাতায় প্রগতিশীল ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেননের দেখা হয়। তিনি আসন্ন শীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৬,০০০ সোয়েটার সরবরাহের দাবি জানান। ওই সময় আবেদ ও ভিকার কলকাতার নিউ ক্যালিনওয়ার্থ হোটেলে অবস্থান করছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) একদিন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জিয়া চট্টগ্রামে আবেদের প্রতিবেশি ছিলেন। সমবয়সী হবার কারণে তাঁদের কিছু মিউচুয়াল বন্ধুও ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে যুদ্ধ করছে; তাদের সামগ্রিক অবস্থা কী; পাকিস্তানিদের মনোভাব কী? এসব বিষয় নিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে স্যার আবেদ ও ভিকার চৌধুরীর আলাপ-আলোচনা হয়। জিয়াউর রহমান তখন তাঁদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দূরবীনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এবং বলেন, ‘দূরবিন থাকলে শত্রু আক্রমণ করার পূর্বে সেটি আন্দাজ করা যাবে।’
‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করা। এ-জন্য প্রথমেই তারা ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পৃথিবীকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তারা মনে করেন, বিশ্ববাসী যদি প্রকৃত ঘটনা উপলব্ধি করতে না পারে তাহলে জনমত গঠন করার কাজটি দূরহ হবে। এছাড়া সাহায্য-সহযোগিতাও পাওয়া যাবে না। এ কারণে শুরুতেই তারা ‘লন্ডন টাইমস’ পত্রিকায় বেশ বড় একটি বিজ্ঞাপন দেন। যেখানে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ও জাতিসংঘের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’ তখন জুন মাস। ইতিমধ্যে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী (যিনি পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি মনোনীত হন) লন্ডনে পৌঁছান এবং লন্ডনের প্রবাসী বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। যেটি ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজকে আরও বেগবান করে। কাজ করতে গিয়ে তাঁরা অনুভব করেন যে— অনেকক্ষেত্রে তাঁদের কাজ করা প্রয়োজন। এই সময় আমরাদেখতে পাই, ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কর্মীরা মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে চলমান গণহত্যার বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখা করছেন। এছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য তাঁরা ব্রিটিশ এমপিদের সঙ্গে দেনদরবারও অব্যাহত রাখেন। ১ আগস্ট ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ট্রাফালগার স্কয়ারে একটা র্যালির আয়োজন করে, যেখানে বাংলাদেশের সমর্থনে প্রায় ২৫ হাজার লোক উপস্থিত হয়। ওই একই দিনে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে বাংলাদেশের সমর্থনে অনুষ্ঠিত হয় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। বিটলস ব্যান্ডের লিডগিটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্করের উদ্যোগে আয়োজিত এ কনসার্টে অংশ নেয় প্রায় ৪০, ০০০ মানুষ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বব ডিলানসহ সেই সময়ের আরও অনেক বিশ্বখ্যাত শিল্পী। পরবর্তীতে এই কনসার্ট ও অন্যান্য অনুষঙ্গ থেকে পাওয়া প্রায় ২,৪৩,৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে ব্যয় করা হয় শরণার্থীদের সাহায্যার্থে।
ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের বাইরে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। এ-সময় কর্মীরা পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন প্যারিস, কোপেনহেগেন-এ যান এবং সেখানকার মিডিয়ার সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। তাঁরা সেখানকার রেডিও ও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নৃশংস পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। যেহেতু, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, কাজেই সেখানকার রেডিও-টিভিতে সাক্ষাৎকার প্রচারের জন্য তাঁদের বেশ বেগও পেতে হয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অবস্থান, ঘটনার প্রেক্ষাপট, গণহত্যা, বাংলাদেশের তখনকার পরিস্থিতি এই বিষয়গুলো মিডিয়ার কাছে তুলে ধরা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। সেই সময় ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর পক্ষে স্যার আবেদ কোপেনহেগেন-এ একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো বিষয়টি বিশদভাবে তুলে ধরেন। এবং বাংলাদেশে যে নির্মম গণহত্যা চলছে সে বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে সে-সময় আন্তজার্তিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলেন তা হলো; বাংলাদেশ কি স্বাধীন হয়ে টিকে থাকতে পারবে? দেশটিতে কী পরিমাণ সম্পদ আছে? বছরে কী পরিমাণ পণ্য রফতানি করতে পারবে? বাংলাদেশ কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, ‘যদি আমরা স্বাধীন হই, তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারবো। আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।’ পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে এই সাক্ষাৎকারগুলো প্রচারের পর বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে জানা শুরু করে।
এদিকে ‘হেল্প’-এর আরেক প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য কায়সার জামান যুদ্ধ শুরু হবার কিছুদিন পর আমেরিকায় চলে যান। সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ নামে একটি লবিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কায়সার সেখানে কাজ করেন। অন্যদিকে ‘হেল্প’-এর অন্যান্য সদস্য যেমন, জন রোডি, লিঙ্কন চেন, রিচার্ড ক্যাশ ঢাকার কলেরা রিসার্চ ল্যাবরটেরিতে (বর্তমান আইসিডিডিআর’বি) কাজ করছিলেন। যেহেতু এরা সবাই ছিলেন মার্কিন নাগরিক, কাজেই যুদ্ধ শুরু হবার পর মার্চের ২৮ বা ২৯ তারিখের দিকে আমেরিকা তাঁদেরকে বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে নেয়। আমেরিকায় ফেরার সময় তাঁরা ঢাকা টেম্পল কমপ্লেক্স-এ হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর সংগঠিত গণহত্যার বেশ কিছু ছবি সঙ্গে করে নিয়ে যান। এবং দেশে ফিরে পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার জন্য তদবির করা শুরু করেন। তাঁরা সিনেট হেয়ারিং-এ এই মর্মে সাক্ষ্য দেন যে, বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। আমেরিকার সিনেটরদের তাঁরা গণহত্যার ছবিও দেখান। জন রোডি ভয়েস অব আমেরিকাতে বিবৃতি দেন। একদিকে ফজলে হাসান আবেদ ও তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা লন্ডনে, এবং কায়সার জামান ও অন্যরা আমেরিকায় তাঁদের কর্মকাণ্ড অব্যহত রাখেন। লিংকন চেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহমর্মী শ্রী কুমার পোদ্দার নামের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ব্যবসায়ী কাছ থেকে তৎকালীন ২৫ হাজার ইউএস ডলার সাহায্য পেতে সহযোগিতা করেন।
এদিকে আগস্ট মাসে আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম ‘নিউজ উইক’-এ পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর নজরে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়: পূর্ব পাকিস্তানে এ বছর আমন ধান না হবার কারণে খাদ্য সংকট দেখা দেবে। এবং যে যে অঞ্চল পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল সেখানেই খাদ্য সরবরাহ করা হবে। অন্য অঞ্চলগুলোতে যেন খাদ্য না পৌঁছায়, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ওখানকার পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও কিছু সংবাদ প্রকাশ পায়। কুষ্টিয়া নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়: ‘পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর একটি জনপদ যেভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়, কুষ্টিয়া শহর ঘুরে আমরা সেরকম দৃশ্যই দেখতে পেয়েছি।’ প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর আগের বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করায় ইউরোপের দেশগুলোতে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ‘নিউজ উইক’-এ দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত দিয়ে যে খবরটি প্রকাশ পায়, তা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজে কিছুটা কৌশলগত পরিবর্তন আনে। এ যাবৎ তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও প্রচারণার কাজগুলো করছিল। এ-পর্যায়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয়- কার্যক্রম শুধুমাত্র প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। একই সঙ্গে মুক্তাঞ্চল বিশেষ করে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সাহায্য পাঠানোর কাজটিও করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর পাশাপাশি ‘হেল্প বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে তোলে। নতুন এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।
এ-পর্যায়ে আবেদ ও ভিকার মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক লোকজনের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন এবং বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ-সময় তাঁরা লন্ডনস্থ সোভিয়েত দূতাবাসে যান এবং সোভিয়েত সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধে তাঁদেরকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। জুলাই মাসে আবেদ ভিয়েতনামের পক্ষে ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা একটা গ্রুপের এক সদস্যের কাছ থেকে রহস্যময় ফোনকল পান। ওই গ্রুপটি ক্যামডেন হাউজে আবেদ ও ভিকারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এদের মধ্যে দু’জন ছিলেন ইংরেজ এবং একজন অস্ট্রেলিয়ান। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, এই গ্রুপটি তাঁদের পক্ষ হয়ে ‘নাশকতামূলক তৎপরতা’ চালাবেন। খসড়া পরিকল্পনা হিসেবে আবেদ ও ভিকার তাঁদেরকে পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দর বা অন্য কোনো জাহাজে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলেন। গ্রুপটি জানায়, ‘গুজরাট উপকূল থেকে মাছধরা ট্রলার নিয়ে তারা করাচি সমুদ্রবন্দরে যাবে এবং সেখানে জাহাজে বোমা পেতে বিস্ফোরণ ঘটাবে।’ এই কাজের জন্য গ্রুপটির সাথে তাঁদের ১৬ হাজার ৮০০ পাউন্ডের একটা চুক্তিও হয়। সেই সময় আবেদ ও ভিকার ভেবেছিলেন, এটি করতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও সাহসিকতার প্রমাণ মিলবে। একই সাথে বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশের নামও উঠে আসবে। কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবার কারণে তাঁদের কিছুটা দ্বিধান্বিত হতেও দেখা যায়। এ-বিষয়ে গোলাম মোর্তজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (২০০৬) ফজলে হাসান আবেদ বলেন:
‘সন্দেহ নেই এরকম একটি নাশকতামূলক কাজ করতে পারলে সেটা বেশ চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হবে। বিশ্ব প্রচারমাধ্যমে উঠে আসবে বাংলাদেশ। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ও সাহসিকতার প্রমাণ হবে। কিন্তু এ-ধরণের একটি ব্যয়বহুল কাজ করব কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।’
পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের আগে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সাথে দেখা করার। যেহেতু মুজিবনগর সরকারের পক্ষে প্রায় সব কাজই তখন তাজউদ্দীন করছিলেন, ফলে বিষয়টিকে তিনি কীভাবে দেখেন বা তাঁর অন্য কোনো পরামর্শ বা পরিকল্পনা আছে কিনা এ বিষয়টি তাঁদের জানার দরকার ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে আবেদ ও ভিকার কলকাতার থিয়েটার রোডে তাজউদ্দীনের অফিসে যান এবং পরিকল্পনার বিষয়টি তাঁকে বলেন। তাঁরা এও জানান যে, ‘এ জন্য তাঁরা ১৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন এবং শত্রুঘাঁটিতে নাশকতামূলক এই কাজটি করে তাঁরা বিশ্বকে চমকে দিতে চান।’ সবকিছু শোনার পর তাজউদ্দীন এ ধরণের অভিযানের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে বলেন এবং এই কাজে এত অর্থ ব্যয় করা উচিৎ হবে না বলে মত দেন। তিনি এও জানান যে, মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাঁরা পুরোপুরি ভারত সরকারের উপর নির্ভরশীল। এই বাবদ যে অর্থ সংগ্রহ হয়েছে সেটা পেলে তাঁরা নিজেরাই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন। এ-সময় ভিকার চৌধুরীর সঙ্গে কলকাতায় প্রগতিশীল ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেননের দেখা হয়। তিনি আসন্ন শীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৬,০০০ সোয়েটার সরবরাহের দাবি জানান। ওই সময় আবেদ ও ভিকার কলকাতার নিউ ক্যালিনওয়ার্থ হোটেলে অবস্থান করছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান (পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) একদিন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জিয়া চট্টগ্রামে আবেদের প্রতিবেশি ছিলেন। সমবয়সী হবার কারণে তাঁদের কিছু মিউচুয়াল বন্ধুও ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে যুদ্ধ করছে; তাদের সামগ্রিক অবস্থা কী; পাকিস্তানিদের মনোভাব কী? এসব বিষয় নিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে স্যার আবেদ ও ভিকার চৌধুরীর আলাপ-আলোচনা হয়। জিয়াউর রহমান তখন তাঁদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দূরবীনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এবং বলেন, ‘দূরবিন থাকলে শত্রু আক্রমণ করার পূর্বে সেটি আন্দাজ করা যাবে।’
তাজউদ্দীন ও জিয়ার সাথে আলোচনা করে আবেদ ও ভিকার বুঝতে পারেন, বোমা বিস্ফোরণে অর্থ ব্যয় করার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সাহায্য করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এ-পর্যায়ে তাঁরা সীমান্ত এলাকায় একটি খাদ্য গুদাম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলগুলোতে খাবার পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়। এ-সময় ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর অপারেশনাল কাজ অর্থাৎ খাদ্য গুদাম তৈরি করার জন্য কলকাতাকে তাঁরা বেইজ হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তা করেন। কিন্তু এ-জন্য ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন ছিল। ভিকার তখন কলকাতায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং খাদ্য গুদাম প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকারের অনুমতি পাবার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, আবেদ লন্ডনে ফিরে এসে অর্থ সংগ্রহের কাজে জোর দেন। পাশাপাশি তিনি পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন। একই সঙ্গে তিনি লন্ডন, প্যারিস, বন, রোমসহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে র্যালি অব্যহত রাখেন। এভাবে ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে অর্থ সংগ্রহের কাজটি এগিয়ে চলে। পত্রিকার বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য-সহযোগিতা আসা শুরু হয়। প্রবাসী বাঙালির বাইরে অনেক বিদেশিরাও অর্থ সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এ-প্রসঙ্গে আবেদ তাঁর এক স্মৃতিচারণায় বলেন:
‘অনেক বিদেশিও সেদিন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্যে অকাতরে অর্থ সাহায্য করেছিলেন। একজন ব্রিটিশ মহিলা এক পাউন্ড পাঠিয়ে লিখেছিলেন, আগামি দুই মাস আমি ডিম খাব না। সেই ডিমের টাকাটা তোমাদের দিলাম। এই মহিলার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি।’
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত অর্থ-সাহায্যের একটা অংশ কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সোয়েটার ও দূরবীণ কেনা হয়। লন্ডনে ‘হেল্প বাংলাদেশ’ অফিসের এক পাশে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের লক্ষ্যে অর্থসংগ্রহের কাজ করেন। অন্যদিকে, ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেল্প বাংলাদেশ’ যৌথভাবে লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে একটি পথ নাটকের আয়োজন করে। সেখানে কীভাবে পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করছে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ব্রিটিশ টেলিভিশন নাটকটি সম্প্রচার করে।
এই কর্মকাণ্ড যখন চলছিল তখন ডিসেম্বরের ৬ তারিখ ভারত স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। স্যার আবেদ তখন একটা টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অবস্থান করছিলেন। এ-সময় তিনি ডেনমার্কসহ অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। সাক্ষাৎকারের পরদিন আরেক সহ-অ্যাক্টিভিস্টকে সঙ্গে নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। এ-সময় স্যার আবেদকে দেখে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাকে কাল রাতে টেলিভিশনে দেখেছি।’ তখন আবেদ তাঁকে বলেন, ‘ভারত আজ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। আপনারা কবে স্বীকৃতি দেবেন?’ উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের বিষয়টি নিয়ে আমরা সত্যিই সহানুভূতিশীল। ইউরোপের মধ্যে আমরাই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চাই।’ পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডেনমার্কসহ ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেনেভা কনভেনশন শর্তাবলীর অধীনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। ওইদিন ভিকার চৌধুরী আসামে ছিলেন। তিনি সিলেট অঞ্চলে খাদ্য প্রেরণের জন্য আসাম সরকারের অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেদিন-ই তিনি স্যার আবেদকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা জানিয়ে চিঠি লেখেন। সে চিঠি লন্ডনে গিয়ে পৌঁছায় চারদিন পর। চিঠির মাধ্যমে আবেদ জানতে পারেন, ভারত থেকে পায়ে হেঁটে শরণার্থীরা দেশে ফিরছে। তাঁদের ঘড়বাড়ি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পাকিস্তানিরা তাদের ঘড়-বাড়ি লুট-পাট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভিকার আবেদকে এও লেখেন, তিনি যেন খুব দ্রুত ফিরে আসেন এবং ফেরার সময় যতোটা সম্ভব টাকা-পয়সা সঙ্গে নিয়ে ফেরেন। সম্প্রতি (২০২২) প্রকাশিত স্কট ম্যাকমিলানের ‘হোপ ওভার দি ফেইট’ বই-এ এ প্রসঙ্গে পাই:
চিঠিতে বাংলাদেশে ফিরে আসা শরণার্থীদের অবস্থার কথা জেনে সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে পড়ে তাঁর। তিনি খুব দ্রুত লন্ডনের চ্যাপ্টার গুছিয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ক্যামডেন হাউজে তাঁর ফ্ল্যাটের শেয়ার ম্যারিয়েটার কাছে ৮,০০০ পাউন্ডে বিক্রী করে দেন। আবেদ ভাবেন, জাগতিক কোনো কিছুর তাঁর আর প্রয়োজন নেই। মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে তিনি যেকোনো কিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। এ-সময় তিনি তাঁর ব্যবহার্য অনেকগুলো টাই ফেলে আসেন। একটা মাত্র সুটকেস, কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এবং তাঁর প্রিয় লেখক শেকসপিয়র ও বার্নাড শ’র কিছু বই নিয়ে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি, রবিবার আবেদ দেশে ফিরে আসেন।
শাল্লা ও দিরাই-এ ব্র্যাক-এর ত্রাণ কর্মকাণ্ড।
ইতিমধ্যে ভিকার চৌধুরী দেশে ফিরে সিলেটে যান এবং সেখানকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনা করার ব্যাপারে আলোচনা করেন। এ-সময় কমরেড বরুণ রায় শাল্লা ও দিরাই অঞ্চলে ভারত-প্রত্যাগত সর্বস্ব হারানো জনগোষ্ঠির মধ্যে ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনার প্রস্তাব করেন। পরামর্শ মোতাবেক ভিকার কিছু ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে দিরাই-এ যান। পরবর্তীতে তিনি আবেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং শাল্লার অবস্থা বর্ণনা করেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবেদ সিলেটে যান এবং কীভাবে এই ত্রাণ কর্মসূচিটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আরও সংগঠিতভাবে করা যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। মার্চের দিকে তিনি ভিকারকে সঙ্গে নিয়ে শাল্লা পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, ওই সময় শাল্লা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত দুর্গম হাওর এলাকা। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। শাল্লার অবস্থা দেখে আবেদ ত্রাণ কর্মসূচিটি পরিচালনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিসটেন্স কমিটি বা সংক্ষেপে ব্র্যাক নামে সংগঠনটি নিবন্ধন করে। কবি সুফিয়া কামালকে চেয়ারম্যান করে ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ভাবে শুরু হয় ব্র্যাকের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। লন্ডনে ফ্ল্যাট বিক্রীর অবশিষ্ট ৬, ৮০০ পাউন্ড এবং কলকাতায় ভিকার চৌধুরীর অ্যাকাউন্টে ‘হেল্প বাংলাদেশ’-এর অব্যবহৃত ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি দিয়ে গঠিত হয় ব্র্যাকের প্রথম ফান্ড। ৯৫, মতিঝিলে ভিকার চৌধুরীর ল’ চেম্বারকে করা হয় ব্র্যাকের প্রথম অফিস। পরবর্তীতে অক্সফাম-ইউকে প্রথম দাতা হিসেবে ব্র্যাককে বড় অংকের তহবিল প্রদান করে। শাল্লা ও দিরাই অঞ্চলের ১৮৭টি গ্রামের ৮৮,০০০ মানুষকে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সহায়তা করার লক্ষ্যে শুরু হয় নয়মাস ব্যাপী (ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২- অক্টোবর, ১৯৭২) শাল্লা সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়।
এভাবে স্বাধীন দেশের দরিদ্র, অসহায়, সব হারানো মানুষকে ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করার মাধ্যমে শুরু হয় ব্র্যাকের প্রথম কার্যক্রম। এ-সময় পেশাগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে ভিকার চৌধুরী ইংল্যান্ডে ফিরে যান। আবেদ তখন তখন পুরো কর্মসূচিটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন।
[লেখক রাব্বী আহমেদ, জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে যুক্ত আছেন ব্র্যাক এবং বিআইজিডি’র যৌথ উদ্যোগে চলমান হিস্ট্রিসাইজিং ব্র্যাক প্রোজেক্ট-এ। প্রকল্পটি বর্তমানে সমন্বয় করছেন জুমানা আসরার। এই প্রকল্পে আরও যুক্ত আছেন মোঃ শফিকুল ইসলাম।]
তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থাবলী
১) ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাক, গোলাম মোর্তজা; মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৬
২) হোপ ওভার দি ফেইট, স্কট ম্যাকমিলান; রৌম্যান অ্যান্ড লিটলফিল্ড, ২০২২
৩) ফ্রিডম ফ্রম ওয়ান্ট, ইয়ান স্মাইলি; দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০৯
৪) অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান গৃহীত কায়সার জামানের সাক্ষাৎকার; ২০২১
৫) ব্র্যাক উন্নয়নের একটি উপাখ্যান, ফারুক চৌধুরী, সুবল কুমার বণিক ও সাজেদুর রহমান; দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০০৯
৬) ফর্মেশন অব ব্র্যাক: অ্যা হিস্টোরিক্যাল অ্যাকাউন্ট, আবু আহসান, সুমাইয়া ইকবাল; বিআইজিডি মনোগ্রাফ নং-১, এপ্রিল ২০২২
৭) মানুষ বড় কাঁদছে: সত্তরের ঘূর্ণিঝড় ও ‘হেল্প’ প্রতিষ্ঠা; রাব্বী আহমেদ, শেষ বার দেখা হয়েছে ২৫ মার্চ, ২০২৩। লিংক- https://bigd.bracu.ac.bd/the-70s-bhola-cyclone-and-the-creation-of-help/
৮) পান্থজনের সখা; যেহীন আহমদ, শেষ বার দেখা হয়েছে ১ এপ্রিল, ২০২৩ লিংক- https://gaanpaar.com/tribute-to-fazle-hasan-abed-by-zahin-ahmed/
৯) শাল্লা প্রোজেক্ট: অ্যান ইন্টিগ্রেটেড প্রোগ্রাম ফর ডেভেলপমেন্ট; ব্র্যাক, ১৯৭২-১৯৭৩।