১.
সামাজিকতায়, সাংস্কৃতিক কুশল বিনিময়ের “দৈহিক ভাষা” যা মূলত মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকার ভংগী (ইতিবাচক অর্থে), “ধর্মীয় আচার প্রতিপালন”, ঈদ বা খুশির ধারণা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, প্রিয়জনদের দূরে রেখে ঈদ করার কষ্ট, চিরায়ত সাংস্কৃতিক অভ্যাস ও মূল্যবোধ, মৃত্যুভয়কেও তোয়াক্কা করে না। বর্তমান করোনা সংকটকালে গণপরিবহন যখন লকডাউনে, তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী পিকআপভ্যানে, ট্রাকের ভেতর তেরপলের তলে আলু, চালের বস্তার মতো গাদাগাদি করে মানুষ শহর থেকে গ্রামমুখী হয়েছে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে।
আবার কেউ অধিক অর্থ ব্যয় করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ইজিবাইক, ইঞ্জিন রিক্সা, প্যাডেল রিক্সা, ভটভটি, ভাড়ায় মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, পায়ে হেঁটে ফিরেছে গ্রামে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে।
একদল মানুষ নিজেদের মোটরসাইকেল করে ফিরেছে, কেউ ভাড়ায় চালিত ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ফিরেছে।
কেউ হয়তো ব্যক্তিগত গাড়ি করে গ্রামমুখী হয়েছে; আর যারা ভি আই পি, তারা হয়তো যথাযথ প্রটোকল নিয়েই নিজ এলাকায় আনন্দ ভাগাভাগি কাম রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছেন।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায়, নাগরিক মানুষের গ্রামে যাওয়ার সময় ব্যবহৃত যানবাহন ও তাদের “ঈদ যাত্রায় ব্যক্তি আচরণকে” (বিহেভিওর্যাল অ্যাস্পেক্ট) বিবেচনা করলে একটা সামাজিক স্তরায়ন খুব সহজেই দেখতে পাওয়া যায়।
সে বিষয়ে আলোচনা করলে “চাকরি থাকবে না”*। তাই প্রসংগ না বাড়িয়ে শুধু একটা কথা বলি, ঈদে বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়নে যে দ্বিধা ও দ্বৈততা তা খুবই নগ্ন হয়ে সামনে এসেছে।
২.
শুরুতে ঢাকা ও এর আশপাশের শিল্পায়নকেন্দ্রিক নগরসমূহের নাগরিকদের বাইরে যাওয়াকে রোধ করার জন্য পুলিশ সোচ্চার হয়েছিল। কাউকে যেতে দিচ্ছিল না, চেকপোস্ট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, কেউ চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে গ্রামে ফিরতে পারবে। এটা কেন করা হলো সেটা নিয়ে আমি মোটেও পরিষ্কার হতে পারি নি। তবে একটা বিষয় অনুমান করেছি, ঈদ বাজারে একটা ঝাঁকি দেয়ার কারনে এটা করা হতে পারে । ঈদের সময়ে নাগরিক মানুষ গ্রামে গেলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। যদিও বর্তমান বাস্তবতায় সেটা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা অনুমান করতে কারোরই কষ্ট হয় না।
সে যাইহোক, মোদ্দাকথা হলো ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারার সুযোগ সামর্থ্যবানদের হাতে থাকে আর রাষ্ট্র তাদের উপেক্ষা করতে পারে না!
৩.
এইদিকটার বাইরে, যদি মানুষের “করোনা সচেতনতা” ও এই মহামারীর কালে স্বাস্থ্যবিধিবদ্ধ নাগরিক ব্যবহারের কথা চিন্তা করি সেখানে নানান সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিষয় কাজ করেছে। জনসচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রচলিত “গণযোগাযোগ সংস্কৃতি”-এর নানান সীমাবদ্ধতা বিষয়ক গবেষণা ফলাফল রয়েছে। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্দ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে যে করোনাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলায়, ব্যক্তি সচেতনতা তৈরিকল্পে বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার পরামর্শ মোতাবেক যে সচেতনতা তৈরির প্রেক্ষাপট সেখানে স্বাস্থ্য তথ্যসমূহ স্থানিকতা ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনে অনেকটাই ব্যর্থ। তা ছাড়া কিছু “ধর্মীয় নেতা” ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্বন্ধে অনুমান করতে না পারার মূর্খতা থেকে ধর্মীয় একটা বয়ান দাড় করায়, যা মূলত সাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে সাধারণ ধর্মভীরু মুসলমানদের মাঝে একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস দাঁড় করিয়ে সেই তথাকথিত “আলেম”দের একটা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। করোনা মহামারীতে ভীত মানুষ ধর্মতে আশ্রয় খুঁজবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যে ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পালন করা জরুরী সে বিষয়গুলো উদারনৈতিকভাবে ধর্মীয় পরিমন্ডলে গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইসলামিক স্কলারদের যে কূপমন্ডুকতা প্রকাশিত হয় তা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক।
এই বিংশ শতাব্দীতেও বাঙালী মুসলমানদের মনন গঠিত হয়, মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমদের তত্ত্বাবধানে। সমাজে যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোর সাথে বৈজ্ঞানিক মতাদর্শের একটা দূরত্ব রয়েছে, সেটা নিয়ে হয়তো গুরুত্ব সহকারে ভাববার সময় এসেছে। এটা কেবল ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে হয়েছে তা কিন্তু নয়। ভারতের বাস্তবতা তো আরো ভয়াবহ। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে সমাজের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর “ক্রিয়া কাঠামো”কে বুঝতে হবে।
৪.
তবে, ঈদের আগের রাতে বসে একটা বিষয় অনুধাবন করেছি যে, বাঙালী মুসলমান সমাজে ঈদ পালন কেবলমাত্র ধর্মীয় আচার পালন নয়। এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য (গুরুত্ব) রয়েছে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে পরিবার, জ্ঞাতি, সমাজ, স্থানিকতা, পূর্বপুরুষের ভিটা, মানুষের সামাজিক শেকড়ের টান এখনো বাংলাদেশী সমাজে শক্তিশালী। ঈদের দিন সকালে মৃত আত্নীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অর্থনীতির যৌক্তিকতা দিয়ে বোঝা যায় না। এখানেই মানুষের মনোসামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট প্রাসঙ্গিকতা পায়। মানুষ নাগরিক জীবনের মাঝে প্রবেশ করলেও পুরোপুরি ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে নি। নগরের সিংহভাগ মানুষ গ্রাম থেকে অভিবাসিত, অভিবাসনে পুশ-পুল যে অনুসঙ্গই কাজ করুক না কেন, ব্যক্তি জীবনে সামাজিক শেকড়ে যুক্ত থাকাটা সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।
ঈদে গ্রামে যাওয়া আসলে কী অর্থ বহন করে, গ্রাম থেকে জীবিকার খোঁজে নগরে আসা ব্যক্তি মানুষের কাছে?
এই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর নাই, একেক ব্যক্তির ব্যক্তিক আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট একেক রকম, একেক জনের বাস্তবতার নিরিখে একেকটি বিষয় প্রকটতর হয়।
তবুও সাধারণীকরণ করার প্রবৃত্তি থেকে বুঝতে চাইলে, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ববোধ (এর মাঝেই অর্থনৈতিক ব্যাপার নিহিত), সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং আবেগ, ধর্মীয় আচার প্রতিপালনকে ঘিরে ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি বিবিধ বিষয় আমলে নেয়া যায়।
৫.
পারিবারিক ও জ্ঞাতিসম্পর্কীয় যে বন্ধন তা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিচালনা করতেও সক্ষম হয়। এই পারিবারিক ও জ্ঞাতিসম্পর্কের ভিতর স্বার্থের সম্পর্ক যেমন আছে আবার নিরেট আবেগের সম্পর্কও রয়েছে।
স্বার্থের সম্পর্কের একটা উদাহরণ হতে পারে, যেমন, গ্রামে দারিদ্রের হাত থেকে বাঁচতে, জীবনের নতুন দাঁড় খুলতে কোন কিশোরী বধু হয়তো স্বামীর সাথে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় বা গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে জীবনের চাকা ঘুরাতে শুরু করে। হয়তোবা অভাবের সংসারে পারিবারিক কলহের জেরে সেই গ্রামীণ বধু নগরের বাস্তবতায় স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে পড়েন। যেহেতু গ্রামে দরিদ্র পরিবারের কাছে ফেরার পথ থাকে না, ফলে তাকে নগরে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এখনো গ্রামীণ সমাজে নারীদের কাজ করা নিয়ে নানান সামাজিক নিগ্রহের অনুসঙ্গ রয়েছে যা ঐ নারীর ব্যক্তিসম্মানে আঘাত হানে। এই বাস্তবতায় ঐ নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা তাকে এক ধরনের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা প্রদান করে। গ্রামে দরিদ্র পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারা তাকে সামাজিক সম্মান দেয়, পরিবারও তার পাশে দাঁড়ায় কেননা দিন শেষে সেই নারীও পুরুষের মতো উপার্জনক্ষম। আর এই বিষয়টা সেই ব্যক্তি নারী উপভোগ করার একটা সুযোগ পায়, ঈদের ছুটিতে যখন পরিবারের সবার জন্য ঈদ উপহার নিয়ে বাড়ি আসে। এখানে সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে মূল্যায়িত হওয়ার মাঝেও ব্যক্তির ঈদ আনন্দবোধ নিহিত রয়েছে। এখানে উপহারের রেসিপ্রোকাল্টি গুরুত্বপূর্ণ।
আবার, একইভাবে কোন পুরুষ হয়তো পরিবার গ্রামে রেখে জীবিকার সন্ধানে নগরে থাকে, সেও ঈদে পরিবারের কাছে ফিরতে বাধ্য থাকে পারিবারিক দায়িত্ববোধের জায়গায়।
৬.
আর যদি ধর্মীয় আচার প্রতিপালন ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রেক্ষিত থেকে দেখা যায়, সেখানে ঈদ সারা বছরের প্রতিক্ষিত একটা উৎসব, যেখানে শেকড়ের মানুষগুলোর সাথে বছরান্তে বা দীর্ঘদিনপর দেখা হওয়ার আবেগ, ঈদের নামাজ, মৃত পূর্বপুরুষের করব জিয়ারত, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো, বিনোদনসহ নানান সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, মূল্যবোধ মিলে এক জটিল সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ দাড়ায়। ফলে ঈদ আর কেবলমাত্র ধর্মীয় প্রপঞ্চ হিসাবে থাকে না। ঈদের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব ব্যক্তি জীবনে কতটা প্রকট, তা এই করোনাকালে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে থেকেও মানুষের ঈদ যাত্রা আর উদযাপন, নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
৭.
লকডাউন করে করোনা মোকাবিলায় অসঙ্গতি, যা ঝুঁকি তৈরি করার তা করে ফেলেছে অনেকাংশেই। সামাজিক পর্যায়ে বিস্তৃতি ঠেকানো অনেক আগেই হাত থেকে ফস্কে গেছে। তাই, করোনা মোকাবিলায় সামাজিক/দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ যে ধরনের স্বাস্থ্যবিধিগুলো রয়েছে সেগুলো এই ঈদ উদযাপনের সময়ে কিভাবে মানুষের আচরণগত করা যায় সে বিষয়টাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করনীয়।
ধর্মীয় নেতাদের এ বিষয়ে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ধর্ম প্রতিপালনের দিক নির্দেশনা দাঁড় করাতে হবে।
কোভিড-১৯ কে সঙ্গে করেই সামনের দিনগুলোতে নতুন সামাজিক বাস্তবতায় ঢুকতে যাচ্ছে সমাজ! ফলে সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্রিয়া কাঠামোতে পরিবর্তন নিয়ে সার্বিকভাবে ভাবতে হবে। ধর্মীয় আচার প্রতিপালন যদিও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের আওতাভুক্ত তবু্ও বাঙালী মুসলমানদের মনন বিবেচনায় এটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে।
৮.
ধর্মীয় রীতি রেওয়াজগুলোকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিধান হিসাবে দেখি। এই রীতিগুলোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যও রয়েছে। যেমন, উদাহরণ হিসাবে জামাতে নামাজ পড়া কিংবা জুমার নামাজ পড়ার কথাই যদি ধরি তবে এখানে সামাজিক যোগাযোগ ও সামাজিকতাকেই দেখতে পাই। এটার সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে।
কিন্ত বর্তমান সময়ে, যেখানে মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর ও গণমাধ্যম নির্ভর একটা সচেতনতায় বসবাস করে, কিংবা নাগরিক জীবনে যখন মানুষ “আত্মকেন্দ্রিকতা” (ইন্ডিভিজুয়ালিজম)-এ অভ্যস্থ তখন এগুলোর সামাজিক গুরুত্ব কমতে থাকে।
আমি জানিনা, সকল ধর্মের এমন ধর্মীয় আচার ও রীতিসমূহ এই বর্তমান সময়ে বিশেষত করোনা প্রেক্ষাপটে কতটা যুগোপযোগী। ধর্মকে পালন করতে যে আচার, রীতি, মূল্যবোধগুলো এখন সমাজে চর্চিত হয় সেগুলো কি নতুন করে ভাববার সময় এসেছে কিনা। এ বিষয়ে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের কূপমণ্ডূকতা ছেড়ে মুক্তচিন্তা করা উচিত, সমসাময়িক বিজ্ঞান নির্ভর বিশ্ব বাস্তবতায় নিবিড় গবেষণা হওয়া উচিত।
বর্তমান করোনা বাস্তবতায় আমরা দেখেছি সকল “ধর্মীয় কট্টরবাদ” কিভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা মাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। করোনা পরিস্থিতি কবে শেষ হবে, আদৌ শেষ হবে কিনা এ নিয়ে নানান অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমতাবস্থায় মানুষকে করোনাকে সঙ্গে করেই পথ চলতে হবে এটা মোটামুটি পরিষ্কার, তবু্ও করোনা “পরবর্তী”** “নিউ নরমাল” বা “নতুন স্বাভাবিক” বাস্তবতায় সংস্কৃতির একটা অংশ ধর্ম তার আচার, রীতিনীতি বিষয়ে কী “নতুন স্বাভাবিক” বাস্তবতা দাঁড়াবে তা ভাবা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা সংস্কৃতি নির্ধারণ করা কোন যুতসই তরিকা নয় কখনোই ।
৯.
তবে কিছু কিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে যেগুলো প্রশংসনীয়, যেমন নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে জামাতে নামাজ আদায় করার বিষয়টি বলা যেতে পারে।
ঠিক একই ভাবে সামাজিক দূরত্বকে মাথায় রেখে নতুন এক সংবেদনশীল সামাজিকতা নিয়ে করোনা বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, ধর্মীয় স্কলার সকলকে সম্মিলিতভাবে উপায় অন্বেষণ করতে হবে, কিভাবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যবিধি’ সমূহ মানুষের ক্রিয়া কাঠামোর প্রেক্ষিতে প্রাত্যহিক আচরণগত হয়ে উঠবে। জনস্বাস্থ্য জ্ঞানকান্ডীয় প্রপঞ্চগুলোকে আমজনতার বোধগম্য করে তুলতে হবে, আর এখানে বিহেভিয়ার কমিউনিকেশন ও নৃবিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরিশেষে…
“নতুন স্বাভাবিক” বাস্তবতায় ঈদের মোলাকাত হতে পারে করোনা অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা নতুন সামাজিকতার ভাষায়, “ভয় যদি জয় করে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দেখা হতে পারে, কাল ঈদের দিন।
যদি মন চায় সংগে ডাকিস.. তবে!.”
* “চাকরি থাকবে না”- বর্তমান সময়ে বহুল পরিচিত একটা শব্দ যা মূলত ব্যক্তির উপর প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারী, ক্ষমতার নিকট শৃঙ্খলিত একটা বাস্তবতাকে রসিকতার সাথে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।
** করোনা “পরবর্তী” সময় বলতে আসলে জনস্বাস্থ্য নীতি দ্বারা নির্ধারিত যে সংজ্ঞায়ন তার একটা আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক (এখানে ক্ষমতার রাজনীতিকে ফুকোডিয়ান চশমা দিয়ে বুঝতে আগ্রহী) প্রেক্ষাপটের কাঠামোতে যেমন পরিবর্তন আসবে তা বোঝায়।
তানভীর শাতিল, উন্নয়ন গবেষক, বি আই জি ডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
Photo : Athar Ali Falahi / CC BY-SA (https://creativecommons.org/licenses/by-sa/4.0)